আধুনিক বিশ্বের চলমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে আলো থেকে আলোকিত করতে স্বীকৃত অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার সিরামিক। দেশের ব্যাপক চাহিদার কথা মাথায় রেখে ২০১১-১২ সেশনে রুয়েটেই প্রথম এই বিভাগের শুভসূচনা ঘটে, যদিও বুয়েটে এই বিষয়ে এম.এস.সি কোর্স চালু আছে।
এখন আসা যাক, গ্লাস এন্ড সিরামিকে কি কি বিষয় পড়ানো হয়। প্রথমেই বলি, বিশ্বে মেটাল আর প্লাস্টিক ছাড়া যা কিছু আছে সবই সিরামিকের অন্তর্ভুক্ত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা নেটে সার্চ দিলে দেখা যাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং নামে সাবজেক্ট খোলা আছে, কিন্তু বাংলাদেশে গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক বিষয়টি একসাথে দেওয়া হয়েছে বিশ্বে শুধুমাত্র গ্লাসেরই ব্যবহার প্রচুর এই কারণে, যাতে করে এটার উপর আলাদা গুরুত্বারোপ করা হয়।
এক কথায় যদি বলতে চাই, গ্লাস এন্ড সিরামিকে কি পড়ানো হয় তাহলে বলতে হবে গ্লাস এন্ড সিরামিক সম্পর্কীয় পণ্য উৎপাদনের প্রক্রিয়া বা ইংরেজিতে যেটাকে বলে প্রোডাকশন প্রসেস । এছাড়া বিভিন্ন রকমের গ্লাস এবং সিরামিকের গঠন প্রণালী এবং তাদের ডিজাইন ও স্ট্রাকচার ডেভলপ ও এনালাইসিস সম্পর্কে বেশ ভালো একটি ধারণা দেওয়া হয় । এই সাবজেক্টে সৃজনশীলতার অনেক সুযোগ রয়েছে । প্রোডাকশন প্রসেস কিভাবে সহজ করা যায় তা একজন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ার এর দায়িত্ব । যত প্রসেস সহজ হবে উৎপাদিত জিনিসের দাম ও তত কম হবে।
অনেকের হয়তবা একটা ধারণা রয়েছে যে সিরামিক মানেই চীনামাটির থালা-বাসন, মগ, টাইলস। মজার ব্যাপার হচ্ছে যে আমার নিজেরও কিন্তু প্রথমদিকে এমনটি ই ধারণা ছিল। কিন্তু সত্যি বলতে, সিরামিকের ব্যাবহারের ক্ষেত্রে এগুলো খুবই সামান্য উদাহরণ । আমাদের মোবাইল সিমকার্ড তৈরি করা হয় সিরামিক উপাদানের উপর রেখে, এছাড়া মেমোরি কার্ড কিংবা হার্ড ডিস্কের যে কোয়ালিটি ডেভলপ সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে হয় একজন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ার কে । এছাড়া রকেট, প্লেন এসবে তো সিরামিকের ব্যবহার আছেই।
এবার আসি জব সেক্টর প্রসঙ্গে। প্রথমেই বলে নেই অনেকের ভেতর একটা ভুল ধারণা রয়েছে যে নতুন সাবজেক্ট যেহেতু তাই হয়তবা জব সেক্টরে তেমন একটা ডিমান্ড নাই। এটা সবার একটা ভুল ধারণা। মুলত ভার্সিটি গুলোতে নতুন বিষয় খোলা হয় দেশের ব্যাপক চাহিদার কথা বিবেচনা করে।
গ্লাস এন্ড সিরামিক পড়ে জব করার প্লেস হচ্ছে বিভিন্ন গ্লাস এবং সিরামিক ইন্ডাস্ট্রি । আমাদের বাংলাদেশে ছোট-বড় সব মিলিয়ে প্রায় ২০০ এর উপর গ্লাস এবং সিরামিক ইন্ডাস্ট্রি আছে ।তাই জবের জন্য আলাদা করে চিন্তা করার কোন অবকাশ নেই। এছাড়া এটা যেহেতু প্রোডাকশন প্রসেস রিলেটেড তাই তুমি ইচ্ছে করলেই প্রোডাকশন সেক্টরে সুইচ করে চলে যেতে পারো।
এছাড়া মার্কেটিং এর ক্ষেত্রেও কিন্তু একজন গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক ইঞ্জিনিয়ার ইচ্ছে করলেই বড় ভুমিকা রাখতে পারে। সুতরাং, বুঝতেই পারছ যে জব ফিল্ডে এই বিষয়ের চাহিদা। একটা বিষয় তোমাদের বলে রাখি যে, যেহেতু রুয়েটেই একমাত্র এই ডিপার্টমেন্টে বি এস সি কোর্স কমপ্লিট করানো হয় তাই চাকরীর ক্ষেত্রে তোমার পূর্বসূরি হবে কিন্তু তোমার ই ক্যাম্পাসের বড় ভাইয়ারা আর বিদেশে তো আরও চাহিদা রয়েছে ।
তারপরে তুমি তোমার দক্ষতা দিয়ে আরও ভাল পজিশনে যাবার সুযোগ তো আছেই। কারণ পড়াশুনা শেষ করে একজন গ্লাস এন্ড সিরামিক ইঞ্জিনিয়ার প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে জব করবে আর এই সেক্টরে দক্ষতা বেশি করে দেখা হয় সিজিপিএ নয় খুশির খবরহচ্ছে- আমাদের দেশের ইন্ডাস্ট্রি গুলো থেকে উৎপাদিত সিরামিক পণ্য এখন বিদেশ ও রপ্তানি হচ্ছে দেশের চাহিদা মিটিয়ে।
শেষে শুধু এটুকুই বলব- দিন যত যাচ্ছে গ্লাস এন্ড সিরামিকের ব্যবহার ততই বাড়ছে এবং নিকট ভবিষ্যতে দেশের অন্যতম চাহিদা সম্পন্ন সাবজেক্ট এটি হতে যাচ্ছে এই বিষয়ে সন্দেহ নেই। সবাই কে সিরামিকের বর্ণীল জগতে স্বাগতম।
লিখেছেন
আব্দুল মোবিন, গ্লাস এন্ড সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং, রুয়েট।